প্রকাশিত: Sun, Dec 4, 2022 2:27 PM
আপডেট: Sat, Jun 21, 2025 10:07 PM

চাহিদা মেটাতে তেল-গ্যাস আমদানি করতে পারবে বেসরকারি খাত: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী

মনজুর এ আজিজ : বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, স্বাধীনভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের স্থানীয় চাহিদা মেটাতে বেসরকারি খাত চাইলে তেল-গ্যাস আমদানি করতে পারে।  শনিবার ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এফইআরবি) আয়োজিত ‘এনার্জি ট্রানজিশন: গ্লোবাল কনটেক্সট অ্যান্ড বাংলাদেশ ‘ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ তথ্য জানান তিনি। জ্বালানি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন এফইআরবির ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সেমিনারটি আয়োজন করা হয়।

ফার্নেস অয়েল আগে থেকেই আমদানি করতো বেসরকারি উদ্যোক্তারা। নতুন নীতিমালা হলে সব ধরনের জ্বালানি তারা আমদানি এবং বিতরণ করতে পারবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি জানান, উদ্যোক্তারা আমদানি করে পাম্পের কাছে বিক্রি করবেন।

নসরুল হামিদ বলেন, আমরা জ্বালানির ধরন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের ক্রয় ক্ষমতা বিবেচনা করছি। আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে কোনও কিছু আমরা এই মুহূর্তে নিয়ে আসতে পারবো না। বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে সম্প্রসারণের উপর জোর দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি। কারণ এতে খরচ অনেক কমে আসবে।  

প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেসব ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, সেগুলোর মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না। 

গ্যাসের দামবৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে উল্লেখ করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, গভীর সমুদ্রে এক্সেপ্লোরেশনের জন্য আমাদের কাছে অফার আসছে। আগে কোনো পার্টিই পাওয়া যায়নি। এখন আমাদের কাছে পার্টি আসছে। তিনি বলেন, অনেক সময় বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন না যে, এখানে একটা বিজনেস কেস ইনভলবড। এটা এমন না যে, গ্যাস পেলাম, কালকে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ব। বিজনেস কেসটা হল খনন করলে সেটা ওই কোম্পানির জন্য লাভজনক হবে কি না? ফিসিবিলিটি ইজ দ্য মেইন থিং। তো ১০ বছর আগে কেন হয়নি? এই কারণেই হয়নি। ইট ওয়াজ নট ফিসিবল। 

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আইওসি ২ ডলারে গ্যাস দেয়। আর সেখানে গিয়ে গ্যাস এক্সপ্লোরেশন করতে গেলে লাগবে ৭ ডলার। তো আমি যদি বলি ৫ ডলার দেবো, কেউ রাজি হবে? কেউ রাজি হয়নি। এটা বুঝতে হবে। এখন দাম বেড়েছে, এখন অনেক মানুষ আসছে।

এই সেমিনারে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, এলএনজি আমদানিতে এখনও নীতিমালায় কোনও বাধা নেই। কোনও বেসরকারি উদ্যোক্তা যদি এলএনজি আমদানি করে, আমরা তাকে স্বাগত জানাবো। গত সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে বেসরকারি খাতে জ্বালানি আমদানির বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এবং জ্বালানি সচিব সরকারের উদ্যোগের বিষয়টি পরিষ্কার করলেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা চাইলেই রাতারাতি জ্বালানির ধরন পরিবর্তন করতে পারবো না। চাইলেই এক সঙ্গে অনেক সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের জমির স্বল্পতা রয়েছে। তিনি বলেন, সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি বড় সমাধান হচ্ছে রুফ টপ সোলার বা ছাদে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন, সরকার এটিকে উৎসাহিত করছে।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম জানান, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি আমদানিতে বছরে অন্তত ২০ থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। এরমধ্যে গ্যাস আমদানিতে ১১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, কয়লা আমদানিতে ৫ বিলিয়ন ডলার, বিদ্যুৎ আমদানি এবং তরল জ্বালানি আমদানিতে আরও ৯ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।

দেশের গ্যাস ফুরিয়ে যাচ্ছে, এ তথ্য সঠিক নয় বলে সেমিনারে মন্তব্য করেন ভূতাত্বিক অধ্যাপক বদরুল ইমাম। তিনি বলেন, অন্তত তিনটি আন্তর্জাতিক গবেষণা বলছে, আমাদের দেশে এখনও ৩৪ টিসিএফ এর মতো গ্যাস রয়েছে। এই গ্যাসের জন্য তিনি স্থলভাগে অনুসন্ধান জোরদার করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসাইন বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন এফইআরবির চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীর। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন এফইআরবির নির্বাহী পরিচালক রিশান নসরুল্লাহ। সম্পাদনা: খালিদ আহমেদ